সময়টা এখন ধর্ষকদের
সেদিন একটি দেয়ালের লিখন দৃষ্টি আকর্ষণ করল: ‘সময়টা এখন আমাদের’। সুন্দর শ্লোগান। কিন্তু কেন যেন আমার মনে হল, ‘সময়টা এখন আমাদের’ স্থলে ‘সময়টা এখন ধর্ষকদের’ লেখা থাকলেই যথোপযুক্ত হত। সময়টা এখন ধর্ষকদের, বাংলাদেশ এখন ধর্ষকদের অভায়ারণ্য । এ দেশে ধর্ষণের মহাৎসব চলছে । তিন বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে কিশোরী, যুবতী, মধ্যবয়সী, বৃদ্ধা– সবাই শিকার হচ্ছেন ধর্ষণের । অভিজাত হোটেল থেকে থেকে বস্তি এলাকা- ধর্ষকদের অভয়ারণ্য যেন সবই ।
পশ্চিমা পোশাকের নারী যেমন টার্গেট হচ্ছেন তেমনি হচ্ছেন হিজাব-পরিহিতারা । নিম্নবিত্ত বা বিত্তহীন নারী কেবল নন, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত থেকে ধনীর দুহিতাকেও পোহাতে হচ্ছে ধর্ষণের নরকযন্ত্রণা ।।
ধর্ষণ করছে কারা…? নন্দকিশোর থেকে শুরু করে যুবক ও মধ্যবয়সীরা– দিনমজুর থেকে দিনে কয়েক লাখ টাকা হাতখরচ পাওয়া ধনীর দুলাল । মনে হচ্ছে যেন ধর্ষণ একটা স্বাধীন সার্বভৌম ক্রীড়া, যা শুধু পুরুষরাই খেলতে পারে । নারীর মতের তোয়াক্কা না করেই…!!!
ধর্ষণ হচ্ছে কোনো কোনো পুরুষের পৌরুষ প্রকাশের এক মহাস্ত্র । পুরুষদের শারীরিক গঠনে জৈবিক ইচ্ছার যে তীব্রতা সেটি কি তাদের ধর্ষণেচ্ছুক হয়ে ওঠার কারণ…? বিষয়টি তা নয় । সমাজ আর সংসারে নারী বিষয়ে নিজের যাবতীয় সৎ-অসৎ ইচ্ছাপূরণে যাবতীয় প্রশ্রয় পেলেই পুরুষ ধর্ষক হয়ে উঠতে সাহস পায় । উন্নত বিশ্বে ধর্ষক ধরা পড়লে ‘পার’ পেয়ে যায় না সহজে– সমাজে বা রাষ্ট্রে ধর্ষকের অবস্থান যা-ই হোক না কেন । কিন্তু আমাদের সমাজের ‘ছাড় দেওয়ার’ সংস্কৃতি ধর্ষণ উৎসাহিত করে ।।
এই সমাজে যে ছাড়ের কথা বলছি তা আইন ও রাষ্ট্রও দেয় ধর্ষককে । মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এখন আবার ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধটির উচ্চ মাত্রা দেওয়ার বন্দোবস্ত হল । বিয়ে নামের তুলসি পাতা দিয়ে ধর্ষণকাজ ধুয়ে নেওয়ার এই উদ্ভট ‘আইডিয়া’ যে নীতিনির্ধারকদের মস্তিস্কে খেলা করেছে, তাদের সুপ্ত মনে ধর্ষকদের প্রতি যে খানিকটা সহানুভূতি বা সমর্থন কাজ করে তা বলা বাহুল্য । না হলে ধর্ষকদের জন্য আরও কঠিন আইন এবং ধর্ষিতার পুনর্বাসনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিকল্পনা না নিয়ে, ধর্ষণের দোহাই দিয়ে নারীর বিয়ের বয়স কমিয়ে দেওয়ার আইনটি হত না । তাতে প্রমাণ হল, রাষ্ট্রযন্ত্র এখনও পুরোপুরি পুরুষতান্ত্রিকতার বলয়ে আবদ্ধ ।।
আমাদের ছাত্রসমাজ চাইলেই অনেক কিছু করতে পারে । যেমনটা কৌটা সংস্কার নিয়ে করা হয়েছিলো । অবশ্য ঐবিষয়টাতে নিজস্ব একটা স্বার্থ ছিলো ছাত্রসমাজের । ধর্ষণে তাদের কোনো পাওনা নেই । সেই হিসেবে গতবছর ৮১৮ টা ধর্ষণের মধ্যে একটারও কোনো প্রকার আলোড়ন সৃষ্টি করা কোনো আন্দোলন দেখা যায়নি । আর না হয়েছে ২০১৬ সালের ৬৫৯ ধর্ষণ নিয়ে ।।
কি লাভ এত এত বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে…? কি হবে এত বড় বড় ডিগ্রি দিয়ে…? যদি বিবেকবানই না হই ।।
আমরা আসলেই জ্বালার যন্ত্রণা ততক্ষণ বুঝিনা,, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের নিজের শরীরে কুঠালের কোপ না লাগে । অন্যের গায়ে আঘাতটা দেখে আমরা শুধুই ইসসসস, আহারে শব্দটা উচ্চারণ করা ছাড়া অন্য কিছুই আমাদের করার নেই ।।
একটা ধর্ষিতার রক্তাক্ত শরীর আর থেঁতলে যাওয়া মুখটা দেখে আমরা ইসসসস, আহারে শব্দ দুটো উচ্চারণ করে বাসায় ডুকে বেছিনে হাত-মুখ ধোয়ার সাথে সাথে রক্তাক্ত থেতলে যাওয়া মুখটাও মন থেকে ধুয়ে ফেলি । এরচেয়ে বেশি আর কিছুই আমরা বিবেকহীন জাতী করতে পারি না ।।
সত্যিই কি এরচেয়ে বেশি কিছু আমরা করতে পারিনা…? নাকি ধুলাবালি বসা নোংরা বিবেক আমাদের করতে দেয় না…?
(ধর্ষণ ও সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট অপরাধগুলোর প্রকটতা, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা প্রতিষ্ঠা এবং “এক দফা, এক দাবি ধর্ষকের দ্রুত বিচার, দ্রুত ফাঁসি” নিশ্চিতের লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন “#হোকপ্রতিরোধ”।।
এ আন্দোলনের সোশাল মিডিয়া গ্রুপের পোর্টাল থেকে – stand against Rape – হোক প্রতিরোধ)
আরিয়ান হাসনাৎ রেদুয়ান রকি
[…] মেয়ে বড় হলে তাকে যৌন হয়রানির স্বীকার হতে হবে, আমি এটা মেনে নিতে পারবোনা। […]